অঙ্গুলিমাল, যার জীবন একটি অবিশ্বাস্য রূপান্তরের গল্প, তার পূর্বজীবনে এক অতি ভয়ানক চরিত্র ছিলেন। কিছু গ্রন্থ অনুসারে, তিনি এক মানবভোজী রাজা হিসেবে জন্মেছিলেন, যিনি যক্ষ নামে পরিচিত (এক ধরনের রাক্ষস)।
তিনি তার রাজ্যে মানুষদের মাংস খেতে শুরু করেন, যখন তাকে এক মৃত শিশুর মাংস পরিবেশন করা হয়।
তার এই নিষ্ঠুরতা দেখে প্রজারা তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে।
এরপর, সৌদাসা নামে এক দেবতা তাকে প্রতিশ্রুতি দেন, যে সে যদি আরও একশো রাজাকে বলি দেয়, তবে সে আবার রাজা হিসেবে ক্ষমতা ফিরে পাবে। কিন্তু, একশো রাজাকে হত্যা করার পর, সৌদাসা পরিবর্তন হয়ে যায় এবং একজন ধার্মিক মানুষে পরিণত হয়।
এই জীবনের পরে, অঙ্গুলিমাল এক রাজপুত্র হিসেবে জন্ম নেন। তবে, তার শত্রুদের হিংসার কারণে তাকে হত্যা করা হয়, এবং মৃত্যুর আগে সে একটি ব্রত গ্রহণ করে যাতে সে ভবিষ্যতে নির্বাণ লাভ করতে পারে। তার পরবর্তী জীবনেই, তিনি গৌতম বুদ্ধের দর্শন গ্রহণ করেন এবং এক কঠিন ও ভয়ংকর জীবন থেকে আধ্যাত্মিক রূপান্তর লাভ করেন।
অঙ্গুলিমালের জীবনের ইতিহাস বহু সংস্কৃত, তিব্বতি এবং চীনা উৎসে পাওয়া যায়। তিনি সাবত্থি নামে একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন এবং এক সময় তার শিক্ষক থেকে ঈর্ষা এবং সহকর্মীদের প্ররোচনায় একটি নিষ্ঠুর মিশনে প্রবৃত্ত হন, যেখানে তাকে হাজার হাজার মানুষের আঙুল সংগ্রহ করতে বলা হয়। এই মিশনে তাকে বহু মানুষকে হত্যা করতে হয় এবং গ্রামবাসীদের দেশত্যাগে বাধ্য করে। এক সময়, রাজা তাকে ধরার জন্য সেনা পাঠায়, তবে অঙ্গুলিমালের মা তার জীবন রক্ষার চেষ্টা করেন। এর পর বুদ্ধ এসে অঙ্গুলিমালকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন।
বুদ্ধের শিক্ষার মাধ্যমে, অঙ্গুলিমাল এক নতুন জীবন শুরু করেন, এবং তিনি সন্ন্যাসী হয়ে ওঠেন। তার এই আধ্যাত্মিক রূপান্তর তার আগের খারাপ কর্মের প্রতিক্রিয়া ছিল, এবং গ্রামের মানুষদের রাগও কিছুটা প্রশমিত হয়, যখন অঙ্গুলিমাল এক মাকে প্রসবের জন্য সাহায্য করেন।
অঙ্গুলিমালের গল্পটি শিখায় যে, যেকোনো মানুষই, তার যত বড়ই পাপী হোক না কেন, সঠিক পথনির্দেশে পরিবর্তন আনতে পারে। এটি আধ্যাত্মিক রূপান্তরের একটি শক্তিশালী উদাহরণ, যা প্রত্যেককে শিখায় যে, জীবনে পরিবর্তন সম্ভব, কেবলমাত্র একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
প্রয়োজন।
0 মন্তব্যসমূহ