ছোটদের গল্প "চন্দ্রচূড় রাজপুত্র "। ঠাকুরমার ঝুলি

       



   চন্দ্রচূড় রাজপুত্র 

   --লালবিহারী দে




এক রাজার ছয় রাণী , কারো ছেলেপুলে নেই । কত সন্নেসী বৈদ্য ব্রতধারীর দোর ধরা করা হল , কত ওষুধ বিষুধ করা হল , কিছুতে কিছু না । রাজার মনে শান্তি নেই । মন্ত্রীরা বলল , মহারাজ আবার বিয়ে করুন । তাই হোক তা হলে ; সপ্তম রাণীর খোঁজে মন করলেন রাজা । রাজপুরী শহরে ছিল এক ঘুঁটেউলি বুড়ি , মাঠ কুড়োনো গোবরের ঘুঁটে শুকিয়ে বেচত বাজারে - সেই তার একমাত্র রুজি । বুড়ির ছিল এক পরমাসুন্দরী মেয়ে , এত রূপ যে , যে তাকে দেখত সেই প্রশংসা করত পাঁচমুখে । কেবল এই অপরূপ রূপের সুবাদে পাতিয়েছিল অতি বড় ঘরের তিন কন্যা । রাজমন্ত্রীর মেয়ে , রাজপুরুতের মেয়ে , বড়লোক সদাগরের এক মেয়ে । তিন কন্যা আর গরিব বুড়ির সেই মেয়ে রাজবাড়ির কাছে এক দিঘিতে নাইছে একদিন । জলে গা মাজছে আর নিজেদের গুণের কথা বলছে । ‘ জানো বোন , ' মন্ত্রীকন্যা বলছে সদাগরের মেয়েকে , আমায় যে বিয়ে করবে কত সুখ হবে তার ? তার আর আমার জন্যে কাপড় কিনতে হবে না । যে কাপড়খানা আমি পরি — তা কখনো ময়লাও হয় না , পুরানো হয় না , ছেঁড়েফাটেও না । ' সদাগরের মেয়ে বলল , সে সুখ বোন আমায় বিয়ে করবে তারও হবে যে কাঠে আমি রাঁধতে যাই সে কখনো পুড়ে যায় না , দিনের পর দিন বছরের পর বছর এক জ্বালানিই চলল । ' রাজপুরুতের মেয়ে বলল , ' আমার স্বামীরও খুব সুখ হবে আমায় বিয়ে করে । একদিন যদি ভাত রাঁধি আমি , সব্বার খাওয়ার পরেও সেই সমান পরিমাণ ভাত থেকে যায় আমার হাঁড়িতে ? ’ গরিব বুড়ির মেয়ের বলা যখন এল , সে বলল , ‘ আমায় যে বিয়ে করবে সেও খুব সুখী হবে সই । দুটো যমজ ছেলেমেয়ে হবে আমার । মেয়ে হবে দেবদেবীর মতন সুন্দরী , আর ছেলেটা জন্মাবে কপালে চাঁদ হাতে তারা নিয়ে । 

আর , এই সবটুকু কথাবার্তা রাজা শুনতে পেলেন আড়ালে দাঁড়িয়ে । মনে মনে ভাবতে লাগলেন , ' যার জ্বালানি কখনো পুড়ে যায় না তেমন মেয়ে দিয়ে বা কী হবে ; যার হাঁড়িতে থেকে যায় অফুরন ভাত তাকে দিয়ে বা কী হবে । কিন্তু চতুর্থ ওই যে রূপবতী মেয়েটি বলল , যমজ ছেলেমেয়ে হবে তার -মেয়ে হবে দেবদেবীর মতন সুন্দরী আর ছেলে হবে কপালে চাঁদ হাতে তারা নিয়ে , ওই মেয়েই আমার চাই । ওই আমার রাণী হবে । '  সেই দিনেই খোঁজখবর করে রাজা জানতে পারলেন ওই মেয়ে হল এক গরিব ঘুঁটে কুড়ুনি বুড়ির মেয়ে ; ভাবা যায় না এমনই অসম ব্যবধান , তবু রাজা স্থির করে ফেললেন , ওকেই বিয়ে করবেন । তখুনি তলব গেল গরিব বুড়ির কাছে । রাজার দূত গিয়ে কুঁড়েঘরের দরজাতে দাঁড়াতে সে তো ভয়েই আকুল ।

নির্ঘাত রাজবাড়ির গোয়াল থেকে গোবর তুলে এনেছে অজান্তে , তারই দণ্ড নিতে ডাক পড়েছে রাজার কাছে । রাজবাড়ি পৌঁছতে সোজা তাকে নিয়ে যাওয়া হল রাজার নিজ - মহলে । রাজা জিগেস করলেন , ‘ খুব সুন্দর একটা মেয়ে আছে তোমার ?

রাজমন্ত্রীর রাজপুরুতের মেয়েদের সে সই ? হ্যাঁ মহারাজ ।'— ‘ তো সেই মেয়েকে আমি বিয়ে করব , সে রাণী হবে । ' নিজের কান দুটোকে প্রত্যয় হয় না বুড়ির এতই অসম্ভব কথা । রাজা কিন্তু গম্ভীর গলায় বলে গেলেন , বুড়ির মেয়েকে বিয়ে করবেন তিনি মনস্থির করে ফেলেছেন । রাজধানী শহরে কানাকানি ছড়িয়ে পড়ল অগৌণে —মহারাজ বিয়ে করতে মন করেছেন মাঠে যে গোবর কুঁড়িয়ে বেড়ায় বুড়ি , তারই মেয়েকে ।

ছ’রাণীর কানে যখন কথা এল তারা বিশ্বাসই করতে চায় না । শেষে রাজা নিজে মুখে বললেন , তারা যা শুনছে তা সত্যি । ‘ মহারাজ কি পাগল হয়ে গেলেন ? ' বিচার করতে বসল তারা রাজার সঙ্গে ‘ ‘ এ কী অবুদ্ধি , এ কি পাগলামি মহারাজ , কাকে ঘরে আনবেন বিয়ে করে সে যে আমাদের দাসী হবারও যুগ্যি নয় ! যার মা বেড়ায় গোবর কুড়িয়ে ঘাটে মাঠে , তাকে কি না আমরা আচার - ব্যাভার করব সমান সমান বলে ! মহারাজ , মাথা আপনার একবারে খারাপ হয়ে গেছে ! ’ রাজার মন তাতে একটুও টলল না । রাজজ্যোতিষী এসে শুভ দিন স্থির করে দিয়ে গেলেন বিয়ের । সেই নির্দিষ্ট দিনে রাজপুরোহিত এসে বেঁধে দিলেন বিয়ের গাঁটছড়া , হতদরিদ্রি ঘুঁটেকুড়ুনি বুড়ির মেয়ে হল রাজার সপ্তমী সুয়োরাণী । বিয়ের উৎসব মিটে য়াবার কতক দিন  পর রাজ্যের আরেক ভাগে রাজা যাবেন ছ ' মাসের জন্যে । যাবার আগে ছোট রাণীকে ডেকে বললেন , ‘ ছ মাসের জন্যে যাচ্ছি রাজ্যের আরেক দিকে । জানি তার আগেই তোমার ছেলে হবে । জন্মের সময়টাতে আমি কাছে থাকতে চাই , নইলে শত্রু অনিষ্ট করতে পারে । এই নাও এই সোনার ঘণ্টা , ঘরে ঝুলিয়ে রাখো গে , ব্যথা উঠলে পরে ঘণ্টা বাজিয়ো , যেখানে যত দূরে থাকি সেই দণ্ডেই এসে পড়ব । মনে রেখো , ব্যাথা উঠলে তখনই কেবল বাজিয়ো । ' এই বলে রাজা চলে গেলেন । ছ ’ রাণী আড়ি পেতে শুনেছিল রাজা কী বলেন , পর দিন ছোটরাণীর ঘরে গিয়ে হাজির একত্তরে — ' কী সুন্দর সোনার ঘণ্টাটি রে তোর ছোট ! কোথায় পেলি ? ঝুলিয়ে রেখেছিস কেন অমনি করে ? ’ ছোট রাণী সরলচিত্তে বলল , ‘ ও তো রাজা দিয়ে গেছেন , যদি বাজাই মহারাজ যেখানেই থাকুন সেই মুহুর্তে চলে আসবেন । ’ ‘ অসম্ভব । ' ছ রাণী বলে উঠল , ' তুমি বোন ভুল বুঝেছ রাজার কথা । শত ক্রোশ দূরে থেকে এই ঘণ্টা লোকে শুনবে , এ কি বিশ্বাস করবার কথা ? আর শোনাও যদি যায় , রাজা কি চোখের পলকে এত পথ এসে পড়তে পারবেন ? ও নিশ্চয় একটা ঠকানো কথা । ঘণ্টা বাজিয়ে দেখ , দেখবে রাজার কথা একেবারেই বাজে কথা । আচ্ছা পরীক্ষা করেই দেখ না ’ — ছ ’ রাণীর কথায় প্রথমটায় ছোট রাণী কিছুতেই রাজি নয় , রাজা কী বলে গেছেন তা তো মনে আছে ; কিন্তু শেষ অবধি আর জোর রাখা গেল না , ঘণ্টা বাজিয়ে ফেলল ।

রাজা ততক্ষণে তাঁর আরেক রাজ্যের রাজধানীমুখো সবে আধা পথ গেছেন , ঘণ্টা শুনতেই যাওয়া থামিয়ে লহমা দণ্ডের মধ্যে ফিরে এসে দাঁড়িয়েছেন ছোট রাণীর ঘরে । দেখেন , ছোট রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁর মহলে , – তা হলে সময় না হতে ঘণ্টা বাজালে কেন ? ছ ’ রাণীর জোরাজুরির কথা কিছু না বলে ছোট রাণী বললেন , ‘ ঘণ্টা বাজিয়ে দেখলুম যা বলেছ তা সত্যি কিনা । ' মনে মনে বিরক্ত হলেন রাজা , স্পষ্ট করে বললেন , ' ব্যথা ওঠার আগে আর ঘণ্টা বাজিয়ো না । ’ বলে চলে গেলেন । কতক দিন যায় । কয়েক সপ্তাহ পরে আবার ছ রাণী এসে ধরে পড়ল ছোট রাণীকে , ‘ আরেকবার পরীক্ষা করে দেখ না ! প্রথম বার যখন ঘণ্টা বাজিয়েছিলি রাজা তখন আর কতটুকু দূরে— সেখান থেকে ঘণ্টা শোনাও যায় , চট করে আসাও যায় । কিন্তু অ্যাদ্দিনে নতুন রাজ্যে এখন ভালোমতন থিতু হবার পরে এখন দেখতে হয় সত্যি সত্যি ঘণ্টা রাজা শুনতে পান কি না , আসতেই বা পারেন কি না । ছোট রাণী বহুক্ষণ অবধি কান করল না কথাতে , কিন্তু শেষ অবধি বাজিয়েই ফেলল । যখন ঘণ্টা বাজাল রাজা তখন রাজসভায় বিচার করছেন । ঘণ্টা শুনে ( আর কেউ শুনতে পেল না । সে ঘণ্টা ) তখুনি সভা বন্ধ করলেন , লহমা দণ্ডের মধ্যে এসে দাঁড়ালেন ছোট রাণীর মহলে । দেখলেন প্রসবের কোনো লক্ষণ হয়নি রাণীর ‘ তা হলে আবার কেন ঘণ্টা বাজালে সময় হওয়ার আগেই ? ’ ছ ’ রাণীর পীড়াপীড়ির কথা কিছু না বলে রাণী শুধু বলল , ' আরেকবার দেখলুম পরীক্ষা করে । ' রাজা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন । বললেন , ' দুবার ডেকে এনেছ আমায় অকারণে , এবারে শোনো যখন সত্যি সত্যি কষ্ট পাবে প্রসববেদনায় , যতই আকুল হয়ে ঘণ্টা বাজাও , আমি আসব না । তোমার ভাগ্যে যা আছে তাই তোমার হোক । ' বলে রাজা চলে গেলেন । অবশেষে রাণীর প্রসবের দিন এল । ব্যথা উঠতেই রাণী ঘা দিলেন সোনার ঘণ্টায় । ঘা দিয়ে অপেক্ষা করে আছেন , রাজা এলেন না ।

দেহের সব জোর দিয়ে আবার ঘা দিলেন ঘণ্টায় , রাজা এলেন না । রাজা নিশ্চয় শুনেছিলেন , কিন্তু এতই বিরক্ত হয়েছিলেন রাণীর ওপর যে এলেন না । যখন ছ ’ রাণী দেখল রাজা এলেন না , তারা ছোট রাণীকে গিয়ে বলল , রাজবাড়ির মেয়েদের প্রসব হয় বাইরে , এই নিয়ম , তাকে গিয়ে থাকতে হবে এখন ঘোড়াশালের পাশের চালাঘরে । তারপর তারা রাজবাড়ির দাইকে ডেকে অনেক সোনদানা দিয়ে বশ করল , যেন জন্মাবার পরে ছোট রাণীর সন্তান আর বেঁচে না থাকে । ছোট রাণীর দু'টি হল ছেলেমেয়ে ছেলের কপালে চাঁদ হাতের পাতায় জ্বলছে তারা , আর অপরূপ রূপবতী এক মেয়ে । সদ্য মায়ের কাছে দাই নিয়ে এল দুটো সবে - হওয়া কুকুরছানা — ' এই দেখ কী হয়েছে তোমার । 

যমজ ছেলেমেয়ে দুটো সরিয়ে ফেলল মাটির মালসায় করে । রাণী তখন অচেতন , জানতেই পারলেন না , কখন কে কোথায় নিয়ে গেল তাঁর যমজ ছেলেমেয়ে দুটোকে ।

রাজা যদিও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন ছোট রাণীর ওপর , যখন মনে হল , যে ছেলে জন্মাবে সে তাঁরই সিংহাসনে উত্তরাধিকারী , মন বদলে ফিরে এলেন পর দিন ভোরে । ‘ এই যে রাণীর ছেলেমেয়ে — বলে রাজার সামনে নিয়ে আসা হল কুকুরছানা । রাজার ক্রোধ আর বিরক্তর সীমাপরিসীমা রইল না ।

হুকুম করলেন , রাজবাড়ি থেকে দূর করে দেওয়া হোক ছোট রাণীকে , এর পর সে পরবে পশুর ছাল – বাজারের গোরু আর কুকুর তাড়াবে – এই তার চাকরি । পা ফেলে চলতে পারে না , তবু রাণীবেশ খুলে পশুছাল পরিয়ে , বাজারের গোরু - কুকুর তাড়ানোর কাজে তাকে বহাল করে রেখে আসা হল তখুনি । এদিকে দাই সেই যমজদুটোকে মাটির মালসায় সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভাবতে বসল সবচেয়ে ভালো কোন্ উপায়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা যায় । দিঘিতে ফেলে দেয়া নয় , ভেসে উঠবে ।

মাটিতে পুঁতে দেয়া নয় , শেয়ালে খুঁড়ে তুলবে লোকের চোখের ওপর । সবচেয়ে ভালো উপায় তার মনে হল পুড়িয়ে ফেলা - ছাই হয়ে যাবে , কোনো চিহ্ন থাকবে না । কিন্তু এমনি ঘোর রাত্তিরে কী করে একা একা পোড়ায় , কেউ যদি একটু না সাহায্য করে ? একটা আশা মনে হল ।

এক কুমোর শহরতলি কিনারায় , দিনমানে সে মাটির বাসন গড়ে চাক চালিয়ে , শেষ রাতে সেগুলো পোড়ায় । দাই ভাবল সবচেয়ে ভালো পথ হল , শেষ রাতে উঠে পোড়ানোর জন্যে সে আপোড়া মাটির পাত্রগুলো সাজান দিয়ে রেখেছে কুমোর তারই ভেতরে তার ওই ছেলেমেয়ে সুদ্ধু মাটির মালসাটাও রেখে আসবে , সবগুলোর ভেতর ছেলেমেয়ে দুটোও পুড়ে ছাই হয়ে যাবে । এই ভেবে দাই তার মালসা সাজিয়ে রেখে এল গিয়ে কুমোরের আপোড়া সেই বাসনপত্তরে মধ্যে । যে কারণেই হোক , কুমোর আর কুমোর - বৌয়ের ঘুমটা সে রাতে হয়ে গেল বেশি । ঘুম ভেঙে কুমোর - বৌ স্বামীকে জাগাতে উঠল সে প্রায় ভোররাত্তির , ‘ শুনছ গো , বড্ড ঘুম ঘুমিয়ে পড়েছি , প্রায় ভোর হয়ে এল এখন ; বাসন পোড়াবার সময় আজ আর পাব কি না কে জানে । ' দ্রুত দরজা খুলে ছুটল সে ভাটার কাছে — বাসনগুলো সার দিয়ে রাখা রয়েছে সেখানে দেখে চোখ দুটোকে বিশ্বাস হয় না — একী ! বাসনকোসন নিখুঁত পোড়ানো , চকচক করছে লাল । সে , তার স্বামী কেউ তো আগুন জ্বালেননি কাল রাতে । সৌভাগ্যে কী করবে দিশা না পেয়ে আবার ছুটল স্বামীর কাছে - ‘ একবার এসে দেখে যাও গো , দেখে যাও । ' কুমোর বেরিয়ে এসে দেখে তো অবাক । এত ভালো তো কখনো পোড় খায়নি তাদের বাসন ! কে পোড়ালো ? এ নিশ্চয় কোনো দেবদেবীর লীলা । বাসন হাতে ধরে দেখতে গিয়ে একটা তার উলটে গেল হঠাৎ ‘ দেখ দেখ- ’ জড়ানোমোড়ানো দুটো সদ্যোজাত শিশু যেন অমানুষ রূপে ঝলমল করছে । কুমোর বৌকে বলল , ‘ কুমোরনী রে , তোকে ভান করতে হবে ও বাচ্চা তোর ।



' সেই মতন ব্যবস্তাপত্তর করা হল , সময় হলে একটু একটু করে ছড়িয়ে দেওয়া হল খবরটা — যমজ খোকাখুকু হয়েছে ‘ কুমোরনীর । আহা কী রূপ ছেলেমেয়ে দুটোর ! আশেপাশের এয়ো - বৌরা দেখতে এল কুমোর বৌ আর তার ছেলেমেয়েদের , সুকামনা জানিয়ে গেল তার আশাতীত ভাগ্যে । সাজানো ছেলেমেয়ে নিয়ে আর কত গর্ব করে , শুভাকাঙ্ক্ষী পড়শিনী মেয়েদের কুমোর - বৌ বলল , ' ছেলেপুলের আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম দিদি ! ভগবান দিয়েছেন , এখন তোমরা পাঁচজনে আশীর্বাদ করে যাও যেন চিরায়ু হয় । ' বেড়ে উঠতে লাগল , তাবলাতোবলা হয়ে উঠতে লাগল ছেলেমেয়েদুটো । পথেঘাটে যেখানে খেলতে যায় ভাইবোনে , যে দেখে প্রশংসা করে ; ভগবানের আশীর্বাদ— এমন দেবদূতের মতন ছেলেমেয়ে পেল কুমোর , ভাগ্য বলতে হবে । যখন বারো বছর বয়স হয়েছে তাদের , মরণব্যাধিতে পড়ল কুমোর । আয়ু তো ফুরিয়ে এল বৌ ; তবে যে রেখে গেলাম তাতে বাঁচার আর অকুলান হবে না ; নিজেকে দেখিস , ছেলেমেয়ে দুটোকেও দেখিস । বৌ বলল , ' ভাবছ , তোমার পরে আমি বেঁচে থাকব ! সতীসাধ্বী বৌদের , মতন আমিও যাব তোমার সঙ্গে , এক চিতেয় পুড়ব । ছেলেমেয়ে যথেষ্ট বড় হয়েছে , নিজেরাই নিজেদের দেখতে পারবে ; তুমি তো টাকাকড়িও রেখে যাচ্ছ অপরিযাপ্ত । ' সই - সাঙাতনীরা অনেক নিবৃত্ত করার চেষ্টা করল কুমোরনীকে , বৃথাই । কুমোর মারা গেল , পুড়োবার কালে সদ্য বিধবা তার বৌ সেই চিতায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু বরণ করে নিল । বোন তার কুমোরের ব্যবসাটা দিল বন্ধ করে , চাক বেচে সরা - মালসা সব বেচে তারা দু'জনে গিয়ে উঠল রাজধানী শহরের বাজারে । যে মুহুর্তে ঢুকেছে বাজার ভর্তি যেন হঠাৎ আলো ঝলমল করে উঠেছে । দোকানিরা তো ভয়ানক আশ্চর্য । তারা মনে করেছে কোন দেবতা যেন এসে ঢুকেছেন বাজারে ! ’ বলে একটা বাড়ি তুলে দিল তারা তাদের জন্যে । ভাইবোনে ঘুরে বেড়ায় , জানোয়ারের ছাল পরা কাকতাড়ুয়া মেয়েমানুষটা পিছু পিছু যায় । ঘুরঘুর করতে থাকে যেখানে তাকে সেই বাড়ির আশেপাশে কে জানে কী টানে । কতকদিনে ছেলে একটা ঘোড়া কিনল । শিকার করতে যায় আশপাশের জঙ্গলে । এমনি একদিন গেছে , সেদিন রাজাও শিকারে এসেছেন সেই বনে— আরেক শিকারী দেখে কাছে এলেন । কী সুন্দর ছেলে — দেখামাত্র রাজার মনটা


আরো পড়ুন--মধুমালতী



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ