জগদীশ চন্দ্র বসুর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও বাণী
বিজ্ঞানী ● বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্রের শাশ্বতকথা
জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম
পিতা
মাতা
শিক্ষাজীবন
জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম - ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ময়মনসিংহে। তাঁর পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বিক্রমপুরের রাঢ়িখালে।
পিতা- ভগবান চন্দ্র বসু
বিজ্ঞানী বসুর পিতা কর্মসূত্রে ছিলেন একজন ডেপুটি মেজিস্ট্রিট ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার প্রাথমিক কর্মস্থান ফরিদপুর ও পরে বর্ধমান ও বিভিন্ন জায়গায় নিযুক্ত ছিলেন।
মাতা- বামা সুন্দরী বসু
শিক্ষাজীবন- শুরু করেছিলেন ফরিদপুরের একটি স্কুল থেকে। এরপর ১১ বছর বয়সে তিনি কলকাতা চলে যান এবং সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৮৭৫ সালে এন্ট্রাস পাশ করেন।
বিজ্ঞানের স্নাতক হন তিনি ১৮৭৯ সালে এবং এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান ইংল্যাণ্ডে। ইংল্যাণ্ডের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ে বি.এ. পাশ করেন। ১৮৮৪ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন।
🟡 রেডিও তরঙ্গ আবিষ্কার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনাকালেই জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেন । তিনিই প্রথম তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষনা করেন এবং সর্বপ্রথম রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করতে সেমিকন্ডাক্টর জাংশন ব্যবহার করেন । এছাড়া , এখানকার সময়ে ব্যবহৃত অনেক মাইক্রোওয়েভ যন্ত্রাংশেরও আবিষ্কর্তা তিনি । রেডিও তরঙ্গ বিষয়ে জগদীশচন্দ্র তাঁর প্রথম গবেষণা পত্রটি ১৮৯৫ খ্রিঃ প্রকাশ করেন । ঐ একই বছর অক্টোবর মাসে তিনি তাঁর দ্বিতীয় গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করেন ।
🟡 আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার অত্যন্ত দুঃখের বিষয় , জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর গবেষণা পত্রটি যথাযথ ভাবে রচনা করতে পারলেও , তার " পেটেন্ট " করতে পারেন নি । কখনো এটা করাতেও চান নি । কারন বিজ্ঞানের সুফলকে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করার পক্ষপাতি ছিলেন না । তাই তিনি তাঁর গবেষণা পত্র সকলের কাছে উন্মুক্ত করে দেন।
এর ফলে রেডিও তরঙ্গ আবিষ্কারের পুরো কৃতিত্বটাই চলে যায় অন্য আরেক বিজ্ঞানী মার্কানির কাছে । পেটেন্ট না থাকায় , রেডিও তরঙ্গ প্রকৃত আবিষ্কর্তা হিসাবে জগদীশচন্দ্রের কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজোও জোটে নি । জগদীশচন্দ্র তাঁর গবেষণার মধ্য দিয়ে রেডিও ও অপটিক্স সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুসন্ধান করেন । তিনি এমন যন্ত্র আবিষ্কার করেন , যার সাহায্যে কোন তার ছাড়াই বার্তা পাঠানো ও গ্রহন করা যেতো । - তাঁর দেওয়া সমস্ত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই আজকের দিনের Wireless Technology,যেমন –রেডিও , টিভি , কাজ করছে । অথচ ভাবলে বিস্মিত হতে হয় , এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি'ই তিনি পান নি ।গবেষণা পেটেন্ট না করায় তিনি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হন।
● বিজ্ঞানী ● বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্রের শাশ্বতকথা
অতীতঃ তোমরা অতীতের দাস না হইয়া পূর্বপুরুষগণের জ্ঞানরাশির প্রকৃত উত্তরাধিকারী হও ।
অধ্যবসায় : মানুষের অধ্যবসায় হলে ঘন কুয়াশা অপসারিত হইবে এবং একদিন বিশ্বজগৎ জ্যোতির্ময় হইয়া উঠিবে ।
অমর : অমরত্বের বীজ চিন্তায় , বিত্তে নহে ।
আবিষ্কার : নূতন সত্য আবিষ্কার করিবার জন্য সমস্ত জীবনপণ ও সাধনার আবশ্যক ।
উপদেশ: অপরকে উপদেশ দিতে যাইও না। নিজের উপদেশ নিজে পালন করিও।
পরের কর্তব্য কী তাহা নিষ্পত্তি করিবার আমি কে ? আমি কী করিতে পারি ইহাই কেবল আমার ভাবিবার বিষয় ।
শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য আমাদেরও কর্তব্য বিদেশের ওপর নির্ভর না করা ।
ভারতবর্ষে অতীতকালে কর্মের প্রশংসা করা হইত , নিষ্ক্রিয়তার নহে । এমনকি ভারতের যুদ্ধক্ষেত্রেই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানের উন্মেষ হইয়াছিল ।
কল্যাণ : ভারতবর্ষে যদি কোনো স্থায়ী কল্যাণ করিতে হয় , তাহা হইলে ভারতবর্ষের সভ্যতার মধ্যে যাহা নিজস্ব , তাহাই জাগ্রত করিতে হইবে ।
কাপুরুষ : কাপুরুষরাই সর্বদা আশাহীন হয় ।
কৃষি : কৃষিকার্যে সাফল্য লাভ করিতে হইলে উদ্ভিদের পরিবর্ধনের ধারা অবগত হওয়া অবশ্য প্রয়োজনীয় ।
ক্ষাত্র : দুঃখ এবং দুঃখের কারণ নিবারণই ক্ষাত্রধর্ম ।প্রত্যেকে ক্ষত্রিয় হও।
আলোই জীবনের মূল উৎস ।
আরো পড়ুন--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
গাছ : গাছের জীবন মানুষের ছায়া মাত্র ।
জীব কোনোরূপ আঘাত পাইলে চকিত হয় । সেই সংকোচনই জীবনের সাড়া । জীবনের পরিপূর্ণ অবস্থার সাড়া বৃহৎ হয় । অবসাদের সময় ক্ষীণ হয় এবং মৃত্যুর পর সাড়ার অবসান হয় ।
একের জীবনের উচ্ছ্বাসে তুমি অন্য জীবন পূর্ণ করিয়াছ , অনেকে তোমারই নির্দেশে জ্ঞান সন্ধানার্থে জীবনপাত করিয়াছে । মানবের কল্যাণ হেতু রাজ্য সম্পদ ত্যাগ করিয়া দুঃখ দারিদ্র্য বরণ করিয়াছে এবং দেশসেবায় অকাতরে বধ্যমঞ্চে আরোহণ করিয়াছে । সেই নব জীবনের বিক্ষিপ্ত শক্তি অন্য জীবন জ্ঞান ও ধর্মে , শৌর্যে ও বীর্যে পরিপুরিত করিয়াছে ।
মানুষ যখন তাহার জীবন ও আরাধনা কোনো উদ্দেশ্যে নিবেদন করে , সেই উদ্দেশ্য কখনও বিফল হয় না ; তখন অসম্ভব সম্ভব হইয়া থাকে ।
পুরাতন : পুরাতন লইয়াই বর্তমান গঠিত , অতীতের ইতিহাস না জানিলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অজ্ঞেয় রহিবে ।
বিজ্ঞান অনুশীলন সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য , ভারতীয় সভ্যতার সহিত তাহার সামজ্ঞস্য নাই— এই সমস্ত উক্তি অজ্ঞতাপ্রসূত এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ।
বিজ্ঞান প্রাচ্যেরও নহে ,পাশ্চাত্যেরও নহে, ইহা বিশ্বজনীন ।
বিজ্ঞানের প্রকৃত উদ্দেশ্য মানুষের দুর্বহ ভার লাঘব করা । দৈন্য এবং অভাব আসিয়া জীবনকে মৃত্যুপথে লইয়া যাইতেছে । দেশের আর্থিক উন্নতি সাধন করিতে হইলে কৃষি এবং শিল্প — উভয়েরই উন্নতি সাধন করা আবশ্যক । ইহা করিতে হইলে বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করিতেই হইবে ।
বৈজ্ঞানিক ও কবি : উভয়েই অনুভূতি অনির্বচনীয় একের সন্ধানে বাহির হইয়াছে । প্রভেদ এই কবি পথের কথা ভাবেন না , বৈজ্ঞানিক পথটাকে উপেক্ষা করেন না ।
বিজ্ঞানী : বৈজ্ঞানিককে যে পথ অনুসরণ করিতে হয় তাহা একান্ত বন্ধুর এবং পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের কঠোর পথে তাহাকে আত্মসম্বরণ করিয়া চলিতে হয় । সর্বদা তাহার ভাবনা , পাছে নিজের মন নিজেকে ফাঁকি দেয় । এই জন্যে মনের কথা বাহিরের সঙ্গে মিলাইয়া চলিতে হয় । দুই দিক হইতে যেখানে না মিলে সেখানে তিনি একদিকের কথা কোনো মতেই গ্রহণ করিতে পারেন না ।
মৃত্যু : মৃত্যু সর্বজয়ী নহে ; জড়– সমষ্টির উপরই কেবল তাহার আধিপত্য । মানব চিন্তাপ্রসূত স্বর্গীয় অগ্নি মৃত্যুর আঘাতেও নির্বাপিত হয় না ।
দেহের মৃত্যুই আমাদের পক্ষে ভয়াবহ নহে । ধ্বংসশীল শরীর মৃত্তিকায় মিশিয়া গেলেও জাতীয় আশা ও আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয় না । মানসিক শক্তির ধ্বংসই প্রকৃত মৃত্যু ।
জন্মিবার সময় ক্ষুদ্র ও অসহায় হইয়া শক্তিসাগরে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিলাম । তখন বাহিরের শক্তি ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমার শরীর লালিত ও বর্ধিত করিয়াছে । মাতৃস্তন্যের সহিত স্নেহ - মায়া - মমতা অন্তরে প্রবেশ করিয়াছে এবং বন্ধুজনের প্রেমের দ্বারা উৎফু হইয়াছে । দুর্দিনেও বাহিরের আঘাতের ফলে ভিতরের শক্তি সঞ্চিত হইয়াছে এবং তাহারই বলে বাহিরের সহিত যুঝিতে সক্ষম হইয়াছি ।
আমাদের মধ্যে যে জড়তা , যে ক্ষুদ্রতা , যে ব্যর্থতা আছে তাহাকে সংহার করিবার শক্তিও আমাদের মধ্যেই রহিয়াছে ।
সৃষ্টি : শিব ও রুদ্র । রক্ষক ও সংহারক । এখন ইহার অর্থ বুঝিতে পারিলাম । মানসচক্ষে উৎস হইতে বারিকণার সাগরোদ্দেশে যাত্রা ও পুনরায় উৎসে প্রত্যাবর্তন স্পষ্ট দেখিতে পাইলাম । এই মহাচক্র প্রবাহিত স্রোতে সৃষ্টি ও প্রলয়রূপে পরস্পরের পার্শ্বে স্থাপিত দেখিলাম ।
জাতির উন্নতি সাধন করিতে হইলে প্রকৃত মনুষ্যত্বলাভ করিতে হইবে ; দৃঢ় ও শক্তিসম্পন্ন হইতে হইবে । ভয়ের অতীত হইতে হইবে ; সহস্র প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে হইবে ।
আমরা ক্ষুদ্র সৃষ্টি বস্তু হইয়াও যদি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে স্নেহ মমতার চক্ষে দেখি তবে যিনি আমাদের সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার মমতা আমাদের অপেক্ষা কত বেশী ।
0 মন্তব্যসমূহ