Advertisement

Responsive Advertisement

মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী | Mahatma Gandhi Biography in Bengali

       মহাত্মা গান্ধী
Mahatma Gandhi [ 1869-1948 ] 
আপনি নিজে সেই পরিবর্তন হোন যা আপনি সারা বিশ্বে সবার মধ্যে দেখতে চান।“- মহাত্মা গান্ধী

গুজরাটের পোরবন্দর এলাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে গান্ধীজীর জন্ম হয় ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর ।

৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর বাবার নাম করমচাঁদ গান্ধী । তাঁর কনিষ্ঠতম পুত্র ছিলেন মহাত্মা গান্ধী । তাঁর নাম ছিল মোহনদাস । গুজরাটি প্রথা অনুযায়ী গান্ধীজির পুরো নাম রাখা হল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী

তাঁর মায়ের নাম পুতলী বাঈ । গান্ধীজির ছেলেবেলা মা বাবার সাথে পোরবন্দরেই কেটেছিল । সেখানকার স্থানীয় পাঠশালায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় । যখন তাঁর সাত বছর বয়স , তখন তাঁর বাবা রাজকোর্টের বিচারপতি হয়ে গেলেন ।


গান্ধীজি প্রথমে রাজকোটের এক পাঠশালায় পরেহাইস্কুলে ভর্তি হলেন । ছেলেবেলায় গান্ধী লাজুক এবং ধীর - স্থির - শাস্ত প্রকৃতির ছেলে ছিলেন । ছাত্র হিসাবে ছিলেন মনোযোগী এবং মেধাবী । মাত্র তেরো বছর বয়সে গান্ধীজির বিবাহ হয়ে যায় । এই বিবাহে তাঁর ইচ্ছা - অনিচ্ছার কোনো প্রশ্ন ছিল না । শুধুমাত্র খরচ কমানোর জন্য তিন ভাই - এর একসাথে বিয়ে দেওয়া হয় । সেই সময় গান্ধীজির কাছে তাঁর স্ত্রী কস্তুরীবাঈ বা কস্তুরবা ছিলেন এক খেলার সাথী । কস্তুরবা গান্ধী ছিলেন সম্পূর্ণ নিরক্ষর । গান্ধীজির আন্তরিক প্রচেষ্টায় সামান্য পড়াশুনা শিখেছিলেন । গান্ধীজির বিবাহের তিন বছরের মধ্যেই তাঁর পিতা মারা গেলেন । ১৮৮৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হলেন । এই সময় তিনি বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়বার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । গান্ধীজির পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যই ছিলেন নিরামিষভোজী এবং রক্ষণশীল মনোভাবের । ছেলে বিলাতে গিয়ে বংশের সমস্ত নিয়ম কানুন ভুলে যাবে এই আশঙ্কা করে কেউই তাঁকে প্রথমে বিলাত যাবার অনুমতি দিলেন না । কিন্তু গান্ধীজি তাঁর মায়ের কাছে শপথ করেন বিলাতে গিয়ে তিনি মদ , মাংস , স্ত্রী লোক স্পর্শ করবেন না । শেষ পর্যন্ত গান্ধীজি পরিবারের থেকে সম্মতি পেলেন বিলাতে গিয়ে পড়বার জন্য । তাঁর বিলাত যাত্রা উপলক্ষ্যে রাজকোটের ছাত্ররা তাঁকে অভিনন্দন জানবার ব্যবস্থা করলেন । বিস্ময়ে অবাক হতে হয় যে , গান্ধীজি একদিন আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষকে তাঁর বক্তৃতা দিয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন , সে দিন ছাত্রবন্ধুদের কাছে কয়েকটি কথা বলতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । ১৯৮৮ সালে তিনি ইংল্যাণ্ডে যান ।


সেখানে সর্বপ্রথম তাঁর মনের মধ্যে ইংরেজদের অনুকরণ করে আদব - কায়দা , নাচ , বক্তৃতা দেওয়া , পোশাক পরিচ্ছদ পরা , ফরাসি ভাষা  শেখার ব্যাপারে খুবই উৎসাহ জেগে ওঠে । কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই তিনি বুঝতে করুন না কেন কোনোদিনই পুরোপুরি সাহেব হয়ে উঠতে পারবেন না । পারলেন , তাঁর পক্ষে সাহেব হয়ে ওঠার চেষ্টা করা বৃথা , কারণ তিনি যতই চেষ্টা অল্পদিনের মধ্যেই তিনি নিজের অভ্যস্ত জীবন শুরু করে দিলেন । যথাসম্ভব ব্যয় সংকোচ করার জন্য তিনি দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে যেতেন । বড় বাড়িতে থাকার খরচ অনেক , তাই একটি ছোট বাড়িতে থাকতে আরম্ভ করলেন । নিজের হাতেই রান্না করতেন । এই সময় তিনি লন্ডনের থিওসফিস্টদের সাথে পরিচিত হন । সেই সূত্রেই গীতার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীকালে গীতাই তাঁর জীবনপথের অন্যতম দিশারী হয়ে ওঠে । ১৮৯০ সালে গান্ধীজি একবার এক প্রলোভনের সম্মুখীন হয়েছিলেন কিন্তু ঈশ্বর কৃপায় রক্ষা পান । এই প্রসঙ্গে তিনি আত্মজীবনীতে লিখেছেন , — “ নিমন্ত্রণ পত্র পেয়ে এক ভারতীয় বন্ধুর বাড়িতে যাই , সেখানে একটি স্ত্রী লোকের বাড়িতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে বিলাতী প্রথা অনুসারে তাস লেখা শুরু হল । এতে দোষের কিছু ছিল না , আমিও তাতে যোগ দিলুম । কিছুক্ষণের মধ্যেই অশ্লীল কথাবার্তা শুরু হল । আমার বন্ধু ছিল এ বিষয়ে অভ্যস্ত । ক্রমে আমিও প্রলুব্ধ হতে লাগলাম । যখন মনের বিকার সহ্যের সীমা প্রায় অতিক্রম করে যাচ্ছিল এমন সময় মনে হল স্বয়ং ঈশ্বর বন্ধুর কন্ঠে আবির্ভূত হয়ে বললেন , — তুমি পাপ করতে চলেছ । এ তোমার কাজ নয় , এখান থেকে পালাও লজ্জায় অনুতাপে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম । বন্ধুর কৃপায় মায়ের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা পেল । ১৮৯১ সালে গান্ধীজি ব্যারিস্টারি পাস করে বিলেত থেকে ভারতে ফিরে এলেন । কয়েক মাস পরিবারের সাথে রাজকোটে কাটিয়ে বোম্বাই চলে গেলেন । বোম্বাই যাবার উদ্দেশ্য ছিল ব্যারিস্টারি করা । কিন্তু চার মাসের মধ্যে অর্থ উপার্জনে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারলেন না । একজন ঝানু ব্যারিস্টার হবার জন্য যে ধরনের আচার আচরণ করা প্রয়োজন , গান্ধীজি কোনদিনই তা অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারেন নি এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আবদুল্লা কোম্পানী একদিন গান্ধীজির দাদার কাছে খবর পাঠালেন যদি গান্ধীজি এই মামলা পরিচালনা করার ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান তবে তাঁর সমস্ত খরচ ছাড়াও মাসে একশো পাঁচ পাউন্ড দেবেন


আরো পড়ুন--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন


গান্ধীজি এই প্রস্তানে রাজি হয়ে গেলেন । ১৮৯৩ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার পথে রওনা হলেন সেই সময় শত শত ভারতীয় দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের অধীনে কুলি - মজুরে কাজ করত । শ্বেতাঙ্গদের ভারতীয়দের প্রতি ছিল যেমন ঘৃণা তেমনি অবজ্ঞা । তাদে কাছে ভারতীয় মাত্রই ছিল কুলি । সেই সূত্র ধরে গান্ধীজির নাম হল কুলি ব্যারিস্টার দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার কয়েকদিনের মধ্যেই গান্ধীজি অনুভব করলেন সমাজে দুর্দশা - নির্যাতন - অপমান ভোগ করতে হয় । একদিন গান্ধীজি সর্বস্তরে ভারতীয়দের মামলার ব্যাপারে ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরায় চেপে প্রিটোরিয়া যাচ্ছিলেন । মাঝ রাস্তা ট্রেনের একজন কর্মচারী তাঁকে প্রথম শ্রেণীর কামরা থেকে নেমে অন্য কামরায় যাব । হুকুম দেয় । গান্ধীজি সে হুকুম মানতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ও তাঁর সব কিছু ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হল । শীতের রাত গান্ধীজি যথেষ্ট অপমানিত হয়ে কোনো কিছু স্পর্শ না করে একটি হোটেলে যান । এই ঘটনা থেকে গান্ধীজি গভীরভাবে অনুভব করতে পারলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিষেয় কতখানি প্রবল । তিনি এই ঘটনায় এতটাই বিচলিত হন যে , মনে মনে স্থির করেন ব্যারিস্টারি নয় , বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামই হবে তাঁর জীবনের প্রধান কর্তব্য । এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার একটি ঘোষণা করে ভারতীয়দের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবার হুকুম জারি করেন । এই অবিচারের বিরুদ্ধে গান্ধীজি তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন । তিনি স্থির করলেন এই অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করবেন । দক্ষিণ আফ্রিকায় যে সমস্ত ভারতীয়রা থাকত এতদিন ধরে তারা পশুর মত নীরবে । ইংরেজদের সমস্ত অত্যাচার সহ্য করেছিল । প্রতিবাদ বা আন্দোলন করার কথা কখনো তারা ভাবেনি । তাই গান্ধীজির এই আন্দোলন দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে অভূতপূর্ব উদ্দীপনার সৃষ্টি করল এবং প্রায় দশ হাজার ভারতীয়দের স্বাক্ষর দেওয়া এক দরখাস্ত উপনিবেশ মন্ত্রী লর্ড রিপনের কাছে পাঠানো হল । গান্ধীজী ভারতে ফিরে আসতে চাইলেও স্থানীয় ভারতীয়রা কেউই তাঁকে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তিনি আরো কিছুদিনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে গেলেন । মূলত তাঁর চেষ্টাতেই ১৮৯৪ সালের ২২ শে জন্ম হল নাটাল ভারতীয় কংগ্রেসের । গান্ধীজী এই কংগ্রেসের প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হলেন । এই নাটাল কংগ্রেসই হয়ে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের সংগ্রামের হাতিয়ার । এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য ভারতবর্ষে ফিরে আসেন এবং নিজের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় রওনা হলেন । সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়ঙ্কর প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল । নিয়ম মত জাহাজের সকলকে ২৩ দিন বন্দরে আটকে রাখা হল । ইতিমধ্যে একটি ভুল খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে , গান্ধীজী ভারতে গিয়ে গোরাদের সম্পর্কে নানান মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছেন । সমস্ত গোরারা এই খবর শুনে গান্ধীজীর ওপর ভয়ঙ্কর ক্ষোভে ফেটে পড়ল । একদল গোরা নানাভাবে তাঁকে নির্যাতন করতে শুরু করল । পরে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ এই সব গোরাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেবার জন্য গান্ধীজীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে গান্ধীজী তাদের পরিচয় দিতে অস্বীকার করলেন । এতে ওই গোরাদের দল নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে গান্ধীজীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেন । দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে গান্ধীজী ব্যারিস্টারি ছাড়া ও নানান সমাজসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন । তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ রুগীদের সেবা করতেন । তাঁর এই সেবার অভিজ্ঞতা ব্যপ্ত হয় বুয়র যুদ্ধের সময় । দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সভাল ও অরেঞ্জিয়া প্রদেশে এই বুয়র সম্প্রদায়ের প্রভুত্ব ছিল । ১৮৯৯ সালে বুয়রদের সাথে সোনার খনির কর্তৃত্ব নিয়ে ইংরেজদের যুদ্ধ হল । এই যুদ্ধে গান্ধীজী বুয়রদের সমর্থন না করে রাজভক্ত প্রজা হিসাবে ইংরেজদের সেবা করারজন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী তৈরী করলেন । এই বাহিনী যুদ্ধে আহত ইংরেজ সৈন্যদের সেবা করে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছিল । এই যুদ্ধের পরবর্তীকাল থেকে গান্ধীজীর জীবনে এক পরিবর্তন দেখা গেল । তিনি সরল সাদাসিধা জীবন যাপন করতে আরম্ভ করলেন । নিজের পোশাক পরিচ্ছদ নিজেই কাচতেন । বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে যে সমস্ত উপহার পেতেন তা সাধারণ মানুষ জনের মধ্যেই বিলি করে দিতেন । নিজের আয়ের একটা অংশ গরীব দুঃখীদের সেবায় ব্যয় করতেন । প্রকৃতপক্ষে জীবনের এই পর্যায় থেকে গান্ধীজীর জীবনে যে ব্রহ্মচর্যের সূচনা হয় , আমৃত্যু তিনি সেই ব্রহ্মচর্য পালন করেছিলেন । ১৯০৬ সালে ট্রান্সভাল প্রদেশে এক অর্ডিন্যান্সি জারি করা হয় যে , আট বছরের উপরে সব ভারতীয় নারী - পুরুষকে নাম রেজিস্ট্রি করার আদেশ দেওয়া হয় এবং সকলকে দশ আঙুলের ছাপ দিতে হবে বলে নতুন আইনে ঘোষণা করা হয় । এই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে গান্ধীজী তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেন । এর বিরুদ্ধে প্রতিকার করার জন্য ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করে প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । এই আন্দোলনে গান্ধীজীর নীতি ছিল সত্য ও অহিংসার পথ অবলম্বন করে এই আন্দোলন করা হবে । ক্রমই আন্দোলন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল । গান্ধীজী সহ আরো বহু ভারতীয় বন্দি হলেন । বিচারে তাঁর দু’মাস কারাদণ্ড হল । এই প্রথম কারাবরণ করলেন গান্ধীজী । ১৫ দিন পর সরকার কিছুটা নরম হল । গান্ধীজীর সাথে সরকারের চুক্তি হল যে ভারতীয়রা যদি স্বেচ্ছায় নাম রেজিস্ট্রি করে তবে এই আইন তুলে নেওয়া হবে । অনেক সম্প্রদায় এই আইন মেনে নিলেও পাঠানেরা তা মানতে রাজি হল না । তারা ভাবল যে গান্ধীজি তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন । মীর আলম নামে এক পাঠানের আক্রমণে গুরুতর আহত হলেন গান্ধীজি । কিন্তু তিনি মীর আলমের নামে কোনো অভিযোগ করেননি । কিন্তু অন্যান্যরা সাক্ষ্য দেওয়ায় মীর আলমের জেল হয়ে যায় । গান্ধীজির এই মহানুভবতা দেখে রেভারেন্ড ডোক নামে এক খ্রিস্টান ধর্মযাচক অভিভূত হয়ে যান । তিনি ভেবে ছিলেন গান্ধীজি খ্রিস্টর পথেই এগিয়ে চলেছেন । পরবর্তীকালে রেভারেন্ড ডোকই প্রথম গান্ধীজির জীবনী রচনা করেন । গান্ধীজি আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও ইংরেজরা তাঁর কোনো দাবি মেনে নেয় না । সত্যাগ্রহ আন্দোলন ক্রমে বেড়েই চলে । গান্ধীজি সত্যাগ্রহ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করলেন । মহান রুশ সাহিত্যিক তলস্তয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সত্যাগ্রহ আশ্রমের নাম দিলেন তলস্তয় ফার্ম । এখানে সব ধর্মের মানুষ একসাথে থাকত । সকলে যে যার ধর্ম পালন করত । পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতা করত । এই সময় গোখেল দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অবস্থা বিচার করবার জন্য সেখানে যান । গান্ধীজির সাথে তাঁর পরিচয় হয় । গোখেলের নির্দেশে গান্ধীজি দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনের ভার অন্যদের হাতে তুলে দিয়ে প্রথমে ইংল্যান্ডে যান কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভারতে ফিরে আসেন । ভারতবর্ষে তখন ইংরেজরা শাসন করছে । গান্ধীজি তখন ভারতবর্ষের প্রকৃত চিত্র

সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেন না । তিনি ঠিক করলেন সবার আগে ভারতবর্ষকে চিনবেন । জানবেন ......... এদেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থা না জেনে কোনো আন্দোলন করবেন না । ১৯১৫ সালে আমেদাবাদের কাছে কোচরাব গ্রামে সত্যাগ্রহ আশ্রম প্রতিষ্ঠিত করলেন । এই আশ্রমের মূল নীতি ছিল সত্য - অহিংসা - ঈশ্বরে বিশ্বাস , অস্পৃশ্যতা বর্জন করা । পরবর্তীকালে এই আশ্রমে সবরমতী নদীর তীরে স্থানান্তরিত হয় । উত্তরকালে যা সবরমতী আশ্রম নামেই বিখ্যাত হয়েছিল । সেই সময় ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হত । এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করলেন গান্ধীজি । তাঁকে সমর্থন করতে এগিয়ে এলেন মদনমোহন মালব্য ও আরো অনেক নেতারা । কিছুদিনের মধ্যেই এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করল । এর ফলস্বরূপ ১৯১৭ সালের ৩১ শে জুলাই ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্রমিক পাঠানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল । ক্রমশই গান্ধীজির নাম সমস্ত ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল । দেশের মানুষ তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠছিল । ১৯১৮ সালে ইউরোপে চলা বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজরাও জড়িয়ে পড়েছিল । বড়লাট লর্ড চেমসফোর্ড দিল্লিতে গান্ধীজিকে ডেকে পাঠালেন । তিনি এই যুদ্ধে ভারতীয়দের ইংরেজ পক্ষ সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করলেন । গান্ধীজির ধারণা হয়েছিল ভারতীয়রা যদি ইংরেজদের সাহায্য করে তবে ইংরেজরাও ভারতবাসীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে । অচিরেই গান্ধীজির সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল । ইংরেজদের প্রতি তাঁর এক মোহ ছিল যা থেকে কোনোদিনই তিনি মুক্ত হতে পারেন নি । যুদ্ধের পর সকলেই আশা করে ভারতবাসী এবার স্বায়ত্তশাসন পাবে । কিন্তু তার পরিবর্তে বড়লাট রাওলাট আইন নামে এক দমনমূলক আইন পাশ করেন । এই আইনে বলা হল কেউ সামান্যতম সরকার বিরোধী কাজকর্ম করলে তাকে বিনা বিচারে বন্দী করা হবে । এই আইনের বিরুদ্ধে গান্ধীজি দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিলেন । বিভিন্ন স্থানে গন্ডগোল শুরু হওয়ায় গান্ধীজিকে গ্রেপ্তার করা হল । গান্ধীজিকে গ্রেফতার করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই চারিদিকে হিংসাত্মক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল । গান্ধীজিকে মুক্ত করবার পর জনতা শান্ত হল এবং সামরিক আইন উঠিয়ে দেওয়া হল । এদিকে পাঞ্জাবে আন্দোলন ক্রমশ বেড়েই চলছিল । চারদিকে লুঠতরাজ শুরু হল । এই উত্তাল পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই ইংরেজ সরকার জেনারেল ডায়ারের উপর অমৃতসরের কর্তৃত্ব ছেড়ে দিল । সমস্ত রকমের সভা সমিতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল । ১৩ ই এপ্রিল রামনবমীর মেলা উপলক্ষ্যে জালিয়ানওয়ালাবাগ নামে এক জায়গায় । কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হল । জায়গাটা চারদিকে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা । বাইরে বেরোবার একটি মাত্র পথ । ডায়ারের নির্দেশে সেই নিরীহ জনগণের উপর নির্মমভাবে গুলি চালানো হল । কয়েক হাজার মানুষ হতাহত হল


মহাত্মা গান্ধীর পুরো নাম কি?

বাবার নাম কি?

গান্ধীজীর মায়ের নাম কি?




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ