Advertisement

Responsive Advertisement

আমলকির উপকারিতা – রোগপ্রতিরোধ থেকে চুল ও ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক ওষুধ

 আমলকির উপকারিতা – ১৫টি বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্য গুণ ও ব্যবহারবিধি আমলকি – প্রকৃতির অমৃত ফল 

কাঁচা আমলকি ফল – প্রাকৃতিক ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় রোগপ্রতিরোধে


ভূমিকা:

আমলকি : (Phyllanthus emblica), বাংলার ঘরোয়া একটি পরিচিত ফল। এটি দেখতে সবুজ, ছোট এবং স্বাদে টক ও কিছুটা তিক্ত। তবে এর কার্যকারিতা যেন হাজার ফলের চেয়েও বেশি। ভারতীয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি প্রাচীনকাল থেকেই বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রোগপ্রতিরোধ, হজম, চুল পড়া রোধ, ত্বকের যত্ন – সবক্ষেত্রেই আমলকি এক অতুলনীয় ভেষজ।


এটি শুধু একটি ফল নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবর্ধক টনিক, যার প্রতিটি উপাদান দেহে আলাদা করে কাজ করে। চলুন জেনে নিই আমলকির বিস্তারিত উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি।



আমলকির পুষ্টিগুণ: একটি ফল, 

অনেক গুণ

প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো আমলকিতে এমন সব উপাদান রয়েছে, যা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে যা থাকে:


ভিটামিন C (৪৫০ – ৭০০ mg): এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সহায়ক এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।


ফাইবার (৩ – ৪ গ্রাম):   হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।


আয়রন (০.৪৭ mg):  রক্তস্বল্পতা দূর করে ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।


ক্যালসিয়াম (২৫ – ৩০ mg): হাড় ও দাঁত মজবুত করে।


অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কোষের বার্ধক্য রোধ করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করে।


ক্যারোটিন (৯০ IU): চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।


ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম: স্নায়ুতন্ত্র ও পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখে।



আমলকির ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য 

উপকারিতা


১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

আমলকির উচ্চমাত্রার ভিটামিন C শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, সর্দি, কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।


২.হজম শক্তি বাড়ায়

এর ফাইবার ও ট্যানিন হজমে সহায়ক, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি কমায়, এবং পেট পরিষ্কার রাখে।


৩. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়।


৪.চুল পড়া বন্ধ করে

চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে এবং চুলে প্রাকৃতিক কালো রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে।


৫.ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়

ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণ, ফুসকুড়ি কমায় এবং বলিরেখা প্রতিরোধে কাজ করে।


৬.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।


৭.হার্ট সুস্থ রাখে

খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।


৮. দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে

ভিটামিন A ও ক্যারোটিন চোখের জন্য উপকারী, চোখ শুকিয়ে যাওয়া বা ঝাপসা দেখার সমস্যা কমে।


 ৯.যকৃত পরিষ্কার করে

আমলকি লিভারকে ডিটক্সিফাই করে ও হেপাটাইটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।


১০.ওজন কমাতে সাহায্য করে

দেহের বিপাকক্রিয়া (metabolism) বাড়ায়, অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সহায়ক।


১১.মুখের ঘা, গন্ধ ও দাঁতের সমস্যা দূর করে

প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।


১২.স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে

মন ভালো রাখে, টেনশন কমায় এবং ঘুমে সাহায্য করে।


১৩. অ্যানিমিয়া রোধ করে

আয়রন থাকায় রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে।


 ১৪. অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে

নাক দিয়ে হাঁচি, সর্দি, এলার্জিক কাশি কমাতে কার্যকর।


১৫. মূত্র সংক্রমণ প্রতিরোধ করে

ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা UTI প্রতিরোধে সহায়ক।




আমলকি খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি

প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে আমলকি খাওয়া শরীরকে রাখে সুস্থ ও রোগমুক্ত। নিচে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো:


১. কাঁচা আমলকি:

সরাসরি কাঁচা আমলকি খাওয়া যায়। সকালে খালি পেটে ১টি কাঁচা আমলকি খেলে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়।


 ২. আমলকি রস:

১-২ চা চামচ আমলকি রস, সামান্য গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও রাতে খেলে হজম ও রক্ত পরিষ্কারে সাহায্য করে।


৩.আমলকি চূর্ণ:

আমলকি শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রতিদিন আধা চা চামচ করে সেবন করা যায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি কমায়।


 ৪. ত্রিফলা চূর্ণ:

হরীতকী, বহেড়া ও আমলকি – এই তিন ভেষজ মিলে তৈরি হয় ত্রিফলা, যা একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য রক্ষাক।


 ৫. আমলকি আচার/মোরব্বা:

সুস্বাদু ও সংরক্ষণযোগ্য, কিন্তু চিনি কম ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যকর হয়।




ঘরোয়া উপায়ে আমলকির ব্যবহার

 চুলের যত্নে কি ভাবে নেবেন :

আমলকি গুঁড়া ও নারকেল তেল মিশিয়ে গরম করে মাথায় লাগান।

সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে ও নতুন চুল গজাবে।


ত্বকের যত্নে কি ভাবে নেবেন:

আমলকি রস + মুলতানি মাটি মিশিয়ে ফেসপ্যাক লাগান। রোদে পোড়া ত্বক, ব্রণ কমে যাবে।


ডায়াবেটিক রোগীর জন্য:

খালি পেটে আমলকি রস + করলার রস মিশিয়ে পান করুন।


যাদের জন্য উপকারী:

শিশুরা (চিকিৎসকের পরামর্শে)

গর্ভবতী মহিলারা (সতর্কভাবে)

ডায়াবেটিক রোগী

যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম

 হার্ট ও লিভারের রোগী

ত্বক ও চুলের সমস্যা যাদের আছে



কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

অতিরিক্ত খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।

ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকলে গরম জলের সাথে খেতে হবে।

যাদের কিডনি স্টোনের সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করুন।


উপসংহার

আমলকি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান, যা একসাথে হজম, রোগপ্রতিরোধ, সৌন্দর্য রক্ষা ও মনের প্রশান্তি দেয়। এটি শুধুমাত্র শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সতেজ করে তোলে।


এমন একটি ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও উপকৃত হওয়া যায়। নিয়মিত আমলকি খেলে ওষুধের প্রয়োজন অনেক কমে যেতে পারে।


Contact US 

sanjaykotal058@gmai.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ