আলেকজান্ডার দি গ্রেট জীবনী/Alexander the Great



  আলেকজান্ডার দি গ্রেট
  Alexander the Great
   Alexander the Great     biography in Bengali

 
Alexander the Great biography


 
খ্রিস্টপূর্ব চারশো বছর আগেকার কথা । সেই সময় গ্রিসদেশ অসংখ্য ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল ।
 এমনই একটি রাষ্ট্রের অধিপতি ছিলেন ফিলিপ । তিনি ছিলেন বীর , সাহসী ও রণকুশলী । 
সিংহাসন অধিকার করবার অল্পদিনের মধ্যেই গড়ে তুললেন সুদক্ষ সমগ্র গ্রিসদেশে স্থাপন করলেন তাঁর একাধিপত্য । -এক সৈন্যবাহিনী ।
 তারপর তাঁর জয়যাত্রা শুরু হল । একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে । ফিলিপের সৈন্যবাহিনী যখন বীরদর্পে এগিয়ে চলেছে , এমন সময় ফিলিপ একই সাথে তিনটি সংবাদ পেলেন । তাঁর সেনাপতি পারমেনিও ইলিরিয়ানের বিরূদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেছে । 
অলিম্পিকের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর ঘোড়া জয়লাভ করেছে এবং রানি অলিম্পিয়াস এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন । ফিলিপের এই পুত্ৰই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন বীর আলেকজান্ডার । 

জন্ম বৃত্তান্ত : খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালে আলেকজান্ডারের জন্ম । তাঁর মা ছিলেন কিছুটা অস্বাভাবিক প্রকৃতির । 
সম্রাট ফিলিপকে তিনি কোনো দিনই প্রসন্নভাবে গ্রহণ করতে পারেননি । আলেকজান্ডার জন্মাবার পর তাঁর মা প্রচার করেন আলেকজান্ডার দেবতার সন্তান , কারণ তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন দেবতা সাপ হয়ে তাঁর গর্ভে প্রবেশ করেছিল ।
 ফিলিপ রানির এই প্রচারকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিলেন কি না তা জানা যায় না কিন্তু আলেকজান্ডার বিশ্বাস করতেন দৈব অংশ থেকেই তাঁর জন্ম । 
শিশু বয়েস থেকেই আলেকজান্ডার মায়ের প্রতি বেশি অনুরক্ত ছিলেন । 
মায়ের শিক্ষায় কোনোদিনই পিতা ফিলিপকে শ্রদ্ধা করতে পারেননি আলেকজান্ডার । 
এছাড়া আলেকজান্ডার খুব কমই পিতার সঙ্গ পেয়েছিলেন । অধিকাংশ সময়ই ফিলিপ যুদ্ধে ব্যস্ত থাকতেন । 
যখন প্রাসাদে থাকতেন , নিত্য নতুন নারীসঙ্গে সময় কাটত তাঁর । 
পিতার এই নারীর প্রতি আসক্তিকে কোনদিনই শ্রদ্ধার চোখে দেখেননি আলেকজান্ডার । ছেলেবেলা থেকেই আলেকজান্ডারের দেহ ছিল সুগঠিত , বাদামী চুল , হালকা রং । সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল — আলেকজান্ডারের শরীর থেকে সব সময় একটা অপূর্ব সুগন্ধ বার হত । সমকালীন অনেকেই এই সুগন্ধের কথা উল্লেখ করেছেন । আলেকজান্ডারের প্রথম শিক্ষক ছিলেন লিওনিদোস নামে অলিম্পিয়াসের এক আত্মীয় । 
আলেকজান্ডার ছিলেন যেমন অশান্ত তেমনি জেদী আর একরোখা স্বভাবের । লিওনিদোসের কাছে তিনি শিখতেন অঙ্ক , ইতিহাসের বিভিন্ন কাহিনি , অশ্বারোহণ , তীরন্দাজী ।

 আলেকজান্ডারের সব থেকে প্রিয় ছিল ইলিয়াডের কাহিনি । যুদ্ধবিগ্রহ - বীরত্ব - মৃত্যু ঝঞ্ঝা মুগ্ধ করত তাঁকে । তাঁকে বেশি আকৃষ্ট করত মহাবীর অ্যাকিলিসের কাহিনী । তাঁর মাতুল বংশের সকলের বিশ্বাস ছিল তাঁরা অ্যাকিলিসের বংশধর । আলেকজান্ডার নিজেও অনেক সময় এই ধারণা পোষণ করতেন । কিশোর বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে ফুটে উঠেছিল বিরোচিত সাহস আর তার সাথে সংমিশ্রণ ঘটেছিল তীক্ষ্ণবুদ্ধির । একদিন একজন ব্যবসায়ী একটি সুন্দর ঘোড়া ফিলিপের কাছে বিক্রি করেছিল । ফিলিপের লোকজন ঘোড়াটিকে মাঠে নিয়ে যেতেই সে হিংস্র হয়ে উঠল । যতবারই লোকেরা তার পিঠের ওপর ওঠার চেষ্টা করে ততবারই ঘোড়াটি তাদের আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয় । শেষে আর কেউই ঘোড়ার পিঠে উঠতে সাহস পেল না । কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ফিলিপ আর আলেকজান্ডার । এবার আলেকজান্ডার এগিয়ে এলেন ঘোড়ার পিঠে উঠবেন বলে । তিনি লক্ষ্য করেছিলেন নিজের ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে ঘোড়াটি । তাই তিনি ঘোড়ার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে ঘোড়ার মুখটা সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন । তারপর ঘোড়াটিকে আদর করতে করতে একলাফে ঘোড়ার পিঠের উপর উঠে পড়লেন । উপস্থিত সকলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লেন , যদি ঐ ঘোড়া আলেকজান্ডারকে আহত করে । কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘোড়া ছুটিয়ে ফিরে এলেন আলেকজান্ডার । ঘোড়া থেকে নেমে ফিলিপের সামনে আসতেই তিনি পুত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । বললেন— তোমাকে এইভাবে নতুন রাজ্য জয় করতে হবে । তোমার তুলনায় ম্যাসিডন খুবই ছোট । ফিলিপ বুঝতে পারলেন তাঁর ছেলে অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী । এখন শুধু প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষার এবং যে ভার আলেকজান্ডারের জন্মের সময়ই সমর্পণ করেছেন মহাজ্ঞানী অ্যারিস্টটলের উপর । অ্যারিস্টটল ফিলিপের আমন্ত্রণে ম্যাসিডনে এলেন । সেখানে মিয়েজা গ্রামের অদূরে নিমপাস মন্দির । চারিদিকের মুক্ত প্রকৃতির মাঝে এখানেই অ্যারিস্টটল গড়ে তুললেন তাঁর শিক্ষাকেন্দ্র । তিনি শিক্ষা দিতেন নাটক , কবিতা , গল্প , দর্শন , বিজ্ঞান । এরই সাথে রাষ্ট্রনীতি , সমাজনীতিরও শিক্ষা দিতেন । 
দীর্ঘ তিন বছর ধরে অ্যারিস্টটলের কাছে শিক্ষালাভ করেছিলেন আলেকজান্ডার । পরবর্তীকালে অনেক ঐতিহাসিকের অভিমত ছিল , নিজেকে বিশ্ববিজয়ী হিসাবে গড়ে তোলার শিক্ষা আলেকজান্ডার পেয়েছিলেন অ্যারিস্টটলের কাছ থেকে ।
 আমৃত্যু গুরুকে খুবই সম্মান করতেন আলেকজান্ডার । অ্যারিস্টটলের গবেষণার সমস্ত দায়িত্বভার নিজেই গ্রহণ করেছিলেন । নিজের গুরুর প্রতি সম্মান জানাতে গিয়ে আলেকজান্ডার বলেছিলেন — এই জীবন পেয়েছি পিতার কাছে । কিন্তু সেই জীবনকে কি করে আরো সুন্দর করে তোলা যায় , সেই শিক্ষা পেয়েছি গুরুর কাছে । আলেকজান্ডারের ষোলো বছর বয়সে , ফিলিপ বাইজানটাইন অভিযানে বার হলেন । সেই সময় পুত্রের ওপর রাজ্যের সমস্ত ভার তিনি অর্পণ করলেন । ফিলিপের অনুপস্থিতিতে কিছু অধীনস্থ অঞ্চলের নেতারা বিদ্রোহ ঘোষণা করল । কিশোর আলেকজান্ডার নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে রইলেন না । বীরদর্পে সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং বিদ্রোহীদের পরাজিত করে তাদের বন্দি করে নিয়ে এলেন ম্যাসিডনে ।
 এই যুদ্ধ জয় করে অনুপ্রাণিত হয়ে আলেকজান্ডার সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে চললেন । পোলিস । প্রথম যে দেশ জয় করলেন , নিজের নামে সেই দেশের নাম রাখলেন আলেকজান্ডার পোলিস।
এই সময়ে ম্যাসিডোনের প্রধান শত্রু ছিল এথেনিয়ান এবং থেবানদের সম্মিলিত শক্তি। ফিলিপ এই সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। আলেকজান্ডারকে অশ্বারোহী বাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঝড়ের বেগে শত্রুবাহিনীর বিশাল বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রু বাহিনীর ওপর। আলেকজান্ডার পড়েছেন। তার কৌশল, সাহস, বীরত্ব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও আলেকজান্ডার বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। রাজধানীতে ফিরে তিনি শুনলেন ফিলিপ বিয়ে করছেন। 
 বিয়েতে, নতুন রানির চাচা গর্বিতভাবে বলেছিলেন, "আল্লাহকে ধন্যবাদ, মেসিডন আমার ভাগ্নির কাছ থেকে একটি বৈধ ভবিষ্যত রাজা পাবে।" রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আলেকজান্ডার কাপটা তার কপালে ছুড়ে মারলেন। সাথে সাথে তার শ্বশুর মাটিতে পড়ে গেলেন, ফিলিপ রেগে তার তলোয়ার বের করে আলেকজান্ডারের দিকে ছুটলেন। আলেকজান্ডার একটু দূরে বসে রইলেন। ফিলিপ তার ভারসাম্য রাখতে না পেরে মাতাল অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান তার কাছে আসার আগেই। তার বাবার অবস্থা দেখে আলেকজান্ডার ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেছিলেন যে তিনি, যিনি ইউরোপ থেকে এশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তিনি এক চেয়ার থেকে অন্য চেয়ারে যাওয়ার সাথে সাথে উল্টে গেলেন। পিতা-পুত্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এর পেছনে মায়ের প্ররোচনাই যথেষ্ট ছিল। আলেকজান্ডারের বয়স যখন বিশ বছর তখন ফিলিপকে হত্যা করা হয়। এর পেছনে ছিলেন রানী অলিম্পিয়াসও। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ফিলিপের স্থলাভিষিক্ত হন। প্রথম নিহত হন নতুন রানীর কন্যা, রানি অলিম্পিয়াস নতুন রানীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেন। যাতে ভবিষ্যতে কেউ তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। এই সময় মেসিডনকে ঘিরে শত্রু রাষ্ট্র। ফিলিপের হত্যার উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অধীনস্থ রাষ্ট্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ