Advertisement

Responsive Advertisement

মহাভারতের দ্বিতীয় পর্ব সভাপর্ব

 সভাপর্ব: মহাভারতের দ্বিতীয় পর্ব



পরিচিতি: মহাভারতের ১৮টি পর্বের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বটি হলো সভাপর্ব, যা একদিকে রাজনীতি ও শাসননীতির গভীরতা তুলে ধরে, অন্যদিকে মানবতার মূলনীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কাহিনি বর্ণনা করে। এই পর্বটি শুরু হয়েছে ময়দানবের দ্বারা ইন্দ্রপ্রস্থে এক অনন্য সভাগৃহ নির্মাণের মাধ্যমে। এই পর্বে রাজা যুধিষ্ঠিরের রাজ্য শাসনের কলা, প্রজাদের উন্নয়ন এবং তার সাম্রাজ্য বিস্তারের কাহিনি বিশদে বর্ণিত হয়েছে।

প্রধান বিষয়বস্তুপর্বের শুরুতে রাজ্য ও প্রজাদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় শাসননীতি আলোচিত হয়েছে। মধ্যভাগে যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ এবং তার সাম্রাজ্য বিস্তারের বিবরণ রয়েছে। শেষের দিকে যুধিষ্ঠিরের দ্যূতক্রীড়া (জুয়া খেলা) আসক্তির কারণে রাজ্য হারানোর করুণ কাহিনি এবং দ্রৌপদীর নিগ্রহের ঘটনায় অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে মানবতার কণ্ঠ প্রতিফলিত হয়েছে।

গঠনশৈলী ও অধ্যায়বিন্যাস:  এই পর্বটি মোট ১০টি উপপর্ব ও ৮১টি অধ্যায়ে বিভক্ত।


উপপর্বসমূহ ও তার অন্তর্গত ঘটনাবলী:

১. সভাক্রিয়াপর্ব

ময়দানব কৃষ্ণের নির্দেশে ইন্দ্রপ্রস্থে অপূর্ব সভাগৃহ নির্মাণ করেন।

কৃষ্ণ দ্বারকায় যাত্রা করেন।

ময়দানব অর্জুন ও ভীমকে যথাক্রমে এক শঙ্খ ও এক গদা প্রদান করেন।

যুধিষ্ঠিরের সভায় প্রবেশ ও নতুন সভাগৃহ উদ্বোধন।


২. লোকপালসভাখ্যানপর্ব

নারদের যুধিষ্ঠিরের সভায় আগমন এবং শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নচ্ছলে উপদেশ প্রদান।

ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের ও ব্রহ্মার সভার বর্ণনা।

রাজা হরিশ্চন্দ্রের মাহাত্ম্যের বিবরণ এবং পাণ্ডুর বার্তা যুধিষ্ঠিরকে জানানো।

আরো পড়ুন আদিপর্ব

৩. রাজসূয়ারাম্ভপর্ব

যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ করার সঙ্কল্প।

কৃষ্ণের অনুমতি এবং জরাসন্ধের গল্প।


৪. জরাসন্ধবধপর্ব

ভীম ও অর্জুনের সহায়তায় কৃষ্ণ জরাসন্ধকে পরাজিত ও হত্যা করেন।


৫. দিগ্বিজয়পর্ব

পাণ্ডবদের বিভিন্ন দিগ্বিজয় অভিযানের বিবরণ।


৬. রাজসূয়িকপর্ব

যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ শুরু।


৭. অর্ঘাভিহরণপর্ব

কৃষ্ণকে অর্ঘ প্রদান।

শিশুপালের কৃষ্ণনিন্দা।


৮. শিশুপালবধপর্ব

যজ্ঞসভায় শিশুপালের কৃষ্ণের প্রতি অপমানজনক আচরণ।

কৃষ্ণের হাতে শিশুপালের বধ এবং রাজসূয় যজ্ঞের সমাপ্তি।


৯. দ্যূতপর্ব

দুর্যোধনের ঈর্ষা ও শকুনির প্ররোচনা।

যুধিষ্ঠিরকে দ্যূতসভায় আমন্ত্রণ।

শকুনির চালাকিতে যুধিষ্ঠির ধীরে ধীরে রাজ্য, ধন-সম্পত্তি এবং দ্রৌপদীকে বাজি রেখে সব হারান।

দ্রৌপদীর নিগ্রহ এবং ভীমের শপথ।

ধৃতরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাণ্ডবদের সাময়িক মুক্তি।

১০. অনুদ্যূতপর্ব

পুনরায় দ্যূতক্রীড়া, যেখানে পাণ্ডবদের ১২ বছরের বনবাস এবং ১ বছরের অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য করা হয়।


উপসংহার:

 সভাপর্ব একদিকে রাজনীতির সূক্ষ্ম কৌশল এবং অন্যদিকে মানবতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল শাসনের বার্তা দেয়। এই পর্বের ঘটনাগুলি মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সূচনা করে এবং 

পাণ্ডবদের জীবনকে চিরতরে পরিবর্তন করে দেয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ