নিম গাছ (Neem Tree): প্রাকৃতিক ঔষধি গুণে ভরপুর এক আশ্চর্য গাছ
ভূমিকা
নিম গাছ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica, আমাদের বাংলার প্রতিটি গ্রামে, শহরে, উঠোনে বা রাস্তার ধারে দেখা যায়। এটি শুধু একটি গাছ নয়, বরং প্রকৃতির এক আশীর্বাদ। আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত। নিম পাতার তিক্ততা, বাকলের ও রসের ঔষধি গুণ প্রাচীনকাল থেকেই স্বীকৃত।
নিম গাছের পরিচিতি
বৈজ্ঞানিক নাম: Azadirachta indica
পরিবার: Meliaceae
উৎপত্তিস্থল: ভারতীয় উপমহাদেশ
স্থানীয় নাম: বাংলায় নিম, হিন্দিতে ‘नीम’, ইংরেজিতে ‘Neem’
নিম গাছের বিভিন্ন অংশ ও তার গুণাগুণ
১. নিম পাতা কি উপকার :
২. নিমের ছাল কি উপকার:
দাঁতের মাড়ির রোগ, মুখের দুর্গন্ধ রোধে ব্যবহৃত হয়, ছালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় ওষুধ গাঁটে ব্যথা ও সংক্রমণে কার্যকর কাজ করে ।
এলোভেরার উপকারিতা: Clik Here 👈
৩. নিম ফল
ফল থেকে তৈরি হয় নিম তেল উকুন, চুলের ফাঙ্গাস ও খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে পোকামাকড় তাড়াতে নিম ফলের গুঁড়ো কার্যকর
৪. নিম ফুল
নিম ফুল খাওয়া যায় এবং রুচি বাড়াতে সাহায্য করে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে
৫. নিম তেল
চুল ও ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয় এবং প্রাকৃতিক মশা তাড়ানোর উপায় ও বাতজ ব্যথা কমাতে কার্যকর
নিম গাছের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
১. চর্মরোগে নিম ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ, একজিমা, খোস-পাচড়া, চুলকানি দূর করতে নিম পাতা সিদ্ধ করে স্নান করা বা পাতার রস ব্যবহার করা যায়।
২. দাঁতের যত্নে নিমের ডাঁটি অনেক সময় টুথব্রাশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ি শক্ত করে, দাঁত পরিষ্কার রাখে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
৩. চুল পড়া ও খুশকিতে
নিম তেল বা পাতার রস চুলে ব্যবহারে খুশকি দূর হয় এবং চুল পড়া কমে। এটি মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
৪. মশা ও পোকামাকড় প্রতিরোধে
নিম তেলের গন্ধ মশা ও ঘরোয়া পোকা তাড়াতে সাহায্য করে। গাছের নীচে মশা কম থাকে বলে অনেকেই বাড়ির পাশে নিম লাগান।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
নিম পাতা সেবনে শরীরের ভিতরের টক্সিন দূর হয় ও ইমিউন সিস্টেম মজবুত হয়।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
নিম পাতার রস রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
৭. বাত ও গাঁটে ব্যথা
নিম তেল গরম করে মালিশ করলে বাতের ব্যথা উপশম হয়।
৮. দাদ ও ঘামাচিতে
নিম পাতা বা নিম তেল চুলকানি, দাদ ও ঘামাচিতে কার্যকরী। শিশুরা আক্রান্ত হলে পাতার জল দিয়ে গোসল উপকারী।
৯. প্রাকৃতিক সার ও কীটনাশক
নিম পাতা ও বীজ পিষে জৈব কীটনাশক তৈরি করা যায়। এটি ফসলের ক্ষতি না করেই পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১০. রক্ত পরিষ্কারে
নিম পাতা বা নিম ক্যাপসুল খেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ততা দূর হয়। মুখে ব্রণ কমে ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।
নিম গাছ লাগানোর উপকারিতা
১) পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখে
২) বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে
৩) গাছের ছায়ায় ঘর ঠান্ডা থাকে
৪) মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে
৫) কীটনাশক গাছ হিসেবে ফসলের পাশে রোপণ করা যায়
আধুনিক গবেষণায় নিম
সতর্কতা:
১) নিমের রস বেশি খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে
২)গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিম ব্যবহার করবেন না
৩)শিশুদের ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় ব্যবহার করুন
উপসংহার
নিম গাছ প্রকৃতির এক অমূল্য রত্ন। এটি শুধু সৌন্দর্যের গাছ নয়, বরং একটি চলন্ত হাসপাতাল। আমাদের উচিত প্রতিটি বাড়ির পাশে অন্তত একটি নিম গাছ লাগানো এবং তার সঠিক ব্যবহার শেখা। আধুনিক জীবন যাত্রায় যেখানে কেমিক্যাল ব্যবহারে অসুখ বেড়ে চলেছে, সেখানে নিম হতে পারে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ সমাধান।
`নিম গাছ, ভেষজ উদ্ভিদ, আয়ুর্বেদ, স্বাস্থ্য টিপস, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, চর্মরোগ, দাঁতের যত্ন`

0 মন্তব্যসমূহ