শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র/ বীজ মন্ত্র /লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা

 মা লক্ষ্মীর টোটকা:-

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র :-

লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা ও মন্ত্র :-




শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র :-

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ

পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।

গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার ভূষিতাম্,

রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।


মা লক্ষ্মীর মন্ত্র

শ্রী লক্ষ্মী বীজ মন্ত্র: 

ওম শ্রীশ্রী শ্রী কমলে কমলালয়ে প্যাসেদ প্রসাদ শ্রীমাদ শ্রী শ্রী শ্রী শ্রী মহালক্ষ্মী নমঃ। 


লক্ষ্মী প্রার্থনা মন্ত্র

নমস্কার সর্বগেবনান বরদাসি হরেঃ প্রিয়া।

 

মা লক্ষ্মীর টোটকা

প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর সামনে দুটো করে প্রদীপ জ্বালা। প্রতি সন্ধ্যায় ঘি-এর প্রদীপ জ্বালালে উপকার পাবেন। আর বাড়ির প্রবেশ দ্বারে প্রদীপ রাখতে পারেন। শাস্ত্র মতে, বাড়ির প্রবেশ দ্বার আলোকিত রাখলে মা লক্ষ্মী প্রবেশ করেন গৃহে।



শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর স্তব মন্ত্র :


ওঁ ত্রৈলোক্য-পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে,

যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা।

ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতির্হরিপ্রিয়া,

পদ্মা পদ্মালয়া সম্পৎপ্রদা শ্রী: পদ্মধারিণী।

দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষীং সম্পূজ্য য: পঠেৎ,

স্থিরা লক্ষীর্ভবেত্তস্য পুত্রদারাদিভি: সহ।

 



শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র :


ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে

সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী।

 



লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা ও মন্ত্র :


শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন,

মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।

লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ,

বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।

হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর,

হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।

গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল,

বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।

মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়,

কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।

কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত,

সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।

সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ,

বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।

লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর,

কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।

অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান,

মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।

সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ,

দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।

রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়,

ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।

অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে,

স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।

স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার,

সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।

তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী,

সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।

স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে,

তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে।

নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা,

কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।

নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ,

অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।

শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়,

মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।

তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে,

তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।

লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে,

কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।

কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া,

দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।

মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল,

মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।

নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়,

কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।

শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি,

কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।

প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে,

করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।

নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন,

ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।

মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী,

দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।

সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে,

কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।

বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী,

কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।

পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর,

এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।

যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন,

ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।

নারায়ণী বলে শুন আমার বচন,

আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।

যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত,

আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।

গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ,

করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।

কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন,

মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।

জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা,

আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।

আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান,

সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।

ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে,

শুনিবে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে।

একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ,

সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।

ব্রত শেষে হুলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে,

এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।

দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়,

দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।

পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে,

ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।

অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা,

স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।

লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হইলো তার,

নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।

কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়,

হইল সংসার তার সুখের আলয়।

এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে,

ক্রমে প্রচারিত হলো দেশ দেশান্তরে।

করিতে যে বা দেয় উপদেশ,

লক্ষীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।

এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস,

লক্ষীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।


পরিশেষে হল এক অপূর্ব ব্যাপার,

যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।

বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে,

নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে।

ভিন্ন দেশবাসী এক বণিক তনয়,

সি উপস্থিত হল ব্রতের সময়।

বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন,

পরস্পর অনুগত ছিল সর্বক্ষণ।

ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়,

বলে এ কিসের ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।

বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন,

লক্ষী ব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।

সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে,

অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে।

ধনজন সুখভোগ যা কিছু সম্ভব,

সকল আমার আছে আর কিবা অভাব।

কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন,

হেন বাক্য কভু আমি না করি শ্রবণ।

ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা,

নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বানিজ্যেতে গেলা।

গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সইতে না পারে,

সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে।

বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি,

চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।

কি দোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন,

অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।

সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে,

বুঝাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে।

নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি,

অবশেষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি।

মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী,

অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবিয়া।

অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে,

অপার করুণা তাই বুঝালে দীনেরে।

বুঝালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে,

ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে।

সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা,

ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।

তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে,

স্বর্গেতে স্বর্গের লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে।

তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে,

বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে।

দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী,

জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।

সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী,

সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।

ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত,

তোমা পদে মতি যেন থাকে অবিরত।

শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি,

কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি।

সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা,

দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।

রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসেশ্বরী,

সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।

কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা,

তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।

প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী,

মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি।

বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী,

শত শৃঙ্গ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।

রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে,

সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে।

দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী,

অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।

পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী,

অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।

অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী,

দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।

এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে,

একাগ্র মনেতে সাধু ব্রত কথা শোনে।

ব্রতের শেষে নত  শিরে করিয়া প্রণাম,

মনেতে বাসনা করি আছে নিজধাম।

গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার,

সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবার।

বধুরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে,

ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে।

নাশিল সাধুর ছিল যত দুষ্ট সহচর,

দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।

আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর,

পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।

সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর,

মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।

এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার,

মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।

এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে,

দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে।

অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন,

ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুন্ঠে গমন।

লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর,

অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।


যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে,

অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে।

লক্ষ্মীর পাঁচালী কথা হল সমাপন,

ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।

সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে,

উলুধ্বনি কর সবে অতি কৌতুহলে।



দুই হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে,

নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে,

নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ